মেঘ রোদ্দুর খেলায় নাটোরে চলছে পাট কাটার উৎসব

by নিজস্ব প্রতিবেদক
Site Favicon প্রকাশিত: ১৩ আগস্ট ২০২৫ ১৮:৩৫
A+A-
Reset

নাটোরে সোনালী আঁশে সুদিন ফিরছে। বিগত দিনের চেয়ে বেশি দামের কারণে কৃষকরা পাট চাষে ক্রমশ আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

জেলায় বেড়েছে পাটের আবাদি জমি। সবুজে ভরপুর রাজ্যে এখন চলছে পাট কাটার ধুম।

সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার বিভিন্ন উপজেলার জলাশয় ও এর পাড় সংলগ্ন স্থানগুলোতে পাট গাছ ভেজানো, আঁশ ছড়ানো, শুকানো ও পাটকাঠি সংগ্রহের সব কর্মযজ্ঞই চলছে যুগপৎভাবে। সবুজ পাট গাছের রূপান্তর ঘটছে সোনালী পাটের আঁশ আর পাটকাঠিতে। রূপালী রৌদ্র মেঘে ঢেকে প্রকৃতিতে নামছে শ্রাবণ ধারা। এর সঙ্গে সহাবস্থান করে গ্রামীণ জনপদে কৃষকরা মেতে উঠেছেন পাট উৎসবে।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে পাটের আবাদ হয়েছে।

Top Selling Multipurpose WP Theme

২৯ হাজার ৮০৯ হেক্টর জমি আবাদ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আবাদ হয়েছে ৩০ হাজার ৮৮০ হেক্টরে। এক দশক আগে জেলায় পাটের আবাদি জমি ছিল চলতি বছরের প্রায় অর্ধেক। হেক্টর প্রতি পাটের গড় উৎপাদনও বেড়েছে।

ইতোমধ্যে ১৩ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমির পাট কাটা হয়েছে। মোট উৎপাদন ৪৬ হাজার ৪৯৯ টন। অর্থাৎ জেলায় বিঘাপ্রতি পাটের উৎপাদন ১১ দশমিক ৬২ মণ।

সরেজমিনে সিংড়া উপজেলার লাড়ুয়া গ্রামে দেখা যায়, কয়েক কিলোমিটার রাস্তার দু’পাশে এবং সংলগ্ন বিল ও ডোবাতে শতাধিক নারী-পুরুষ পাট পঁচানো ও আঁশ ছড়ানোর কাজ করছেন। এই কাজে নারীদের অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মত। তারা মূলত পানিতে না নেমেই পঁচানো পাট পাড়ে তুলে আঁশ ছড়াচ্ছেন।

আঁশ ছড়ানো কাজে নিয়োজিত কুলসুম বিবি বলেন, আমি পাট কাঠি নেওয়ার শর্তে আঁশ ছড়ানোর কাজ করছি।

Top Selling Multipurpose WP Theme

হাতিয়ানদহের গদাই নদীতে নেমে আঁশ ছড়ানো জহির উদ্দিন জানান, আমরা ১০ জন কাজ করছি, প্রতিদিন জনপ্রতি ৫০০ টাকা মজুরী। নদীর পাড়ে আঁশ ছড়ানোর কাজ করছেন আরো ১০ জন নারী।

মিনতি রানী জানান, আমরা সবাই পাটকাঠি নেওয়ার শর্তেই কাজ করছি। এই কাজে অন্যদের সঙ্গে নিয়োজিত হয়েছেন ঋষিপাড়ার প্রায় শতবর্ষী অন্ধ পুষ্প। তিনি বলেন, চোখে দেখি না, তবে এই কাজ আমার জন্য করা খুব কঠিন নয়। উর্পাজন করতে পারছি, এটাই আনন্দের।

রাস্তার দু’ধারে বাঁশের আড় টানিয়ে, কালভার্টের রেলিং কিংবা গৃহস্থ বাড়ির চারপাশ-সর্বত্রই চলছে পাট শুকানোর কাজ। এসব এলাকা জুড়ে ঠায় দাঁড়িয়ে পাটকাঠির বোঝা সমৃদ্ধির জানান দিচ্ছে।

লাড়ুয়া এলাকার কৃষক সাইফুল ইসলাম বরাবরের মত এবারো তার দুই বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। লাড়ুয়া বিলে পাট ছড়ানো শ্রমিকদের কাজ তদারককারী সাইফুল ইসলাম বলেন, এবার আষাঢ়-শ্রাবনে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। হাতের নাগালে আশপাশের সকল জলাধার পানিতে টইটুম্বুর থাকায় জমির পাট অনায়াসে পঁচাতে পারছি, পরিবহনের খরচ নেই। বিঘা প্রতি ১২ মণ করে ফলন পাচ্ছি।

Top Selling Multipurpose WP Theme

নাটোর সদর উপজেলার রাজাপুর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ বদিউজ্জামান বলেন, এবার এলাকায় আশানুরূপ পাট চাষ হয়েছে। গড় উৎপাদন বিঘা প্রতি ১১ মণ ছাড়িয়ে গেছে।

এই ব্লকের জাঠিয়ান এলাকার কৃষক জুবায়ের হোসেন এবার সাত বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। তিনি জানান, পাট কাটা শুরু হয়েছে। আশা করি বিঘায় ১২ মণ করে পাট পাচ্ছি।

নলডাঙ্গা উপজেলার বাঁশিলা গ্রামের কৃষক আরিফুল ইসলাম বলেন, জমিতে গম বা ডাল উঠে যাওয়ার পর আমন মৌসুমের আগে পাট চাষ করা হলে জমি অনাবাদি থাকে না। চৈত্র মাসের মধ্যে পাট বীজ বোনা হলে আগাম পাট কেটে খুব সহজেই আমন মৌসুম ধরা যায়।

নাটোরের আদর্শ কৃষক হাসান আলী বলেন, বিগত কয়েক বছরে কৃষকদের মধ্যে পাট চাষে বেশ আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, পাট বাজারের সম্প্রসারণ ঘটছে। এর ফলে দরও ভালো পাওয়া যাচ্ছে।

Top Selling Multipurpose WP Theme

নাটোরের প্রসিদ্ধ পাটের হাট গুরুদাসপুরের নাজিরপুর, সদরের তেবাড়িয়া এবং সিংড়ার হাতিয়ান্দহ হাট ঘুরে দেখা যায়, আগাম ওঠা পাট হাটে কেনাবেচা শুরু হয়েছে।

হাতিয়ান্দহ হাটে পাট বিক্রি করতে আসা হারান প্রামানিক বলেন, হাটে সাড়ে তিন হাজার টাকা মণ দরে পাট বিক্রি করলাম। পাটের ব্যবসায়ী আজিজুল ইসলাম মেম্বর জানান, আশাকরি পাটের দর ব্যবসায়ী ও কৃষক উভয়ের জন্যই ভালো হবে। বর্তমানে পাটের দর তিন হাজার টাকা থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত। সামনে দাম আরো বাড়বে বলে মনে হয়। এবার পাটের বিপণন কার্যক্রম জমজমাট।

নাটোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নীলিমা জাহান জানান, আমাদের উপজেলায় বর্তমানে পাটের গড় উৎপাদন বিঘা প্রতি সাড়ে ১১ মণ।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ নাটোর জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোঃ হাবিবুল ইসলাম খান বাসস’কে বলেন, চলতি মৌসুমে প্রচুর বৃষ্টির কারণে পাট জাগ দিতে সহায়ক হয়েছে। পরিবেশ বান্ধব বলেই পাটের বহুমুখী ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে দেশে ও বিদেশে পাটের চাহিদা বাড়ছে। বাড়তি মূল্য পাওয়ার কারণে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন ও পাট চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। তাদের প্রণোদনাও প্রদান করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি জ্ঞানে কৃষকদের এগিয়ে নিতে কৃষি বিভাগ সবসময় কৃষকদের পাশে থাকছে।

Top Selling Multipurpose WP Theme

আপনার পছন্দ হতে পারে