মহিউদ্দিন সুমন, টাঙ্গাইল, বাসস: আনারসের রাজধানী খ্যাত টাঙ্গাইলের মধুপুর পাহাড়িয়া গড়াঞ্চলে উৎপাদিত সবজি পেঁপের এ বছর অধিক ফলন হয়েছে। উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা তুলনামূলক উঁচু হওয়ায় এখানকার কৃষকদের আনারসের পর পেঁপে চাষে আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে।
ফলের পুষ্টি ও সবজির চাহিদা মেটাতে অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে পেঁপে চাষে আগ্রহী উঠেছে এখানকার কৃষক। মধুপুরের উৎপাদিত পেঁপে জেলার চাহিদা মিটিয়ে পাঠানো হচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।
মধুপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর মধুপুরে এক হাজার ৫৬ হেক্টর জমিতে পেঁপে আবাদ হয়েছে। এতে উৎপাদন ধরা হয়েছে ৩৫-৪০ মেট্রিক টন। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৪ শত কোটি টাকা ।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পেঁপে চাষে জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে গাছ থেকে পেঁপে তোলা পর্যন্ত বিঘাপ্রতি ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। দাম ভালো থাকলে বিঘাপ্রতি দেড় থেকে দুই লাখ টাকার বেশি পেঁপে বিক্রি করা যায়। এ কারণে উপজেলার ১১টি ইউনিয়নেই কমবেশি পেঁপের আবাদ হয়ে থাকে। এ ছাড়া চাষীদের পেঁপে জমি থেকে বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে হয় না। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা এসে জমি থেকেই পেঁপে কিনে নিয়ে যান। ঢাকাসহ দেশের সব জেলার সঙ্গে মধুপুরে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় এই এলাকার পেঁপের চাহিদা রয়েছে।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, উচ্চফলনশীল জাত সহজে পাওয়া যাচ্ছে। এতে ফলন দ্রুত হয়, খরচ কম পড়ে, লাভ বেশি হয়। এক সময় শুধু বাড়ির আঙিনায় পেঁপে গাছ লাগানো হতো। এখন বাণিজ্যিকভাবে পেঁপে চাষ হচ্ছে। লাভজনক ফসল হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে পেঁপে চাষে এগিয়ে আসছেন অনেক কৃষি উদ্যোক্তা। আর পেঁপে চাষে পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ।
সরেজমিনে মধুপুরের মিজাবাড়ী, ভাইঘাট, ইদিলপুর, টেলকি, বেরিবাই, গারোবাজার, দোখলা, লাউফুলা, অরণখোলা, আলোকদিয়া, এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দিগন্ত জুড়ে চোখে পড়ছে সবুজ পেঁপে বাগান। গাছে গাছে ঝুলছে পেঁপে। কেউ ফল তুলছেন, কেউ দিচ্ছেন সার-পানি, আবার কেউ লাগাচ্ছেন নতুন চারা। দেশীয় জাতের পাশাপাশি টপ লেডি, গ্রীন লেডি, থাইসহ নানা জাতের পেঁপে চাষ করেছেন। তবে এ এলাকায় সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হচ্ছে টপ লেডি জাতের পেঁপে।
এ সময় কৃষি উদ্যোক্তা শাহাজামাল মিয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, লিজ নিয়ে ৭ বিঘা জমিতে তিনি টপলেডি জাতের পেঁপে চাষ করেছেন। মোট ৭ বিঘা জমির পেঁপে বাগানে খরচ হয়েছে ১০ লাখ টাকা। খরচ একটু বেশি হলেও ২০ থেকে ২২ লাখ টাকার পেঁপে বিক্রির আশা করছেন এই কৃষক। তিনি বলেন, বাগান থেকে ইতোমধ্যে ৩০ টাকা কেজি দরে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার পেঁপে বিক্রি করেছেন। অন্যান্য ফসলের তুলনায় পেঁপের উৎপাদন খরচ কম, লাভ বেশি। অধিক ফলন ও ভাল দামের কারণে আগামীতে আরো বেশি পেঁপে চাষ করবেন বলে জানান তিনি।
রানিয়াদ গ্রামের পেঁপে চাষী মজনু মিয়া বলেন, গত বছরের চেয়ে এ বছর পেঁপের দাম ভালো। এ বছর আমি ৩ বিঘা জমি ২ বছরের জন ২ লাখ টাকা দিয়ে লিজ নিয়েছি। সেখানে ১৫শ পেঁপের চারা রোপণ করেছি, এতে আমার খরচ হয়েছে ৫ লাখ টাকা। আশা করছি ১০ লাখ টাকার পেঁপে বিক্রি করতে পারবো।
পেঁপে ব্যবসারী হাজিজুল জানান, আমি প্রতি বছর ১০-১২ লাক্ষ টাকার পেঁপে বাগান কিনি। এ বছর আমি ১৭ লাখ টাকার পেঁপে বাগান কিনেছি। প্রতি গাছে দেড় থেকে দুই মণ করে পেঁপে ধরেছে। আশা করছি এ বছর ভালো লাভ থাকবে।
মধুপুর উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম জানান, আমার দায়িত্বরত এলাকা শুধুমাত্র মিজাবাড়ী ইউনিয়নে ছোট বড় মিলে ১২টি পেঁপের বাগান রয়েছে। আমি এ সব কৃষি উদ্যোক্তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে কৃষি পরামর্শ প্রদান করে থাকি। যাতে কৃষকরা পেঁপের অধিক ফলন পায় এবং ভালো দামে পেঁপে বিক্রি করতে পারে।
মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রকিব আল রানা জানান, মধুপুরে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর পেঁপের অধিক ফলন হয়েছে । চারা রোপন থেকে শুরু করে উৎপাদন পর্যন্ত কৃষি অফিস থেকে নিয়মিত পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। মধুপুরের তিন ধরনের পেঁপে উৎপাদন হয়, টপ লেডি, রেড লেডি, সুইট লেডি, মধুপুরে টপ লেডি পেঁপে বেশি চাষ হয়। আমরা এবং কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং কর্মচারীগণ প্রতিনিয়ত পেঁপে চাষীদের কাছে যাচ্ছি। যাতে করে আরো বেশি পেঁপের ফলন বৃদ্ধি পায় এবং কৃষকরা পেঁপে আবাদে আরো উৎসাহী হয়।